কক্সবাজারের দুই দ্বীপ উপজেলায় স্বাস্থ্যখাতে জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। মহেশখালী উপজেলায় স্বাস্থ্যখাতে মঞ্জুরীকৃত ২১০ পদের মধ্যে শুন্যপদ আছে ৯৯ টি পদ। কুতুবদিয়া উপজেলায় মঞ্জুরীকৃত ১৩৯টি পদের মধ্যে শুন্যপদ আছে ৭৫টি। যার ফলে উপকূলীয় এই উপজেলার স্বাস্থ্যখাত অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে।
প্রাপ্ততথ্যে জানা যায় মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ(প্রথম শ্রেণীর) পদ কর্মকর্তার পদ রয়েছে ২৯টি। তৎমধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। তৎমধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ডের ১০টি পদই খালী রয়েছে। কর্মরত আছেন মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ১ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ২ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন ডেন্টাল সার্জন, কালারমারছড়ায় একজন ইউএসসি মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে ২৬টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। টেকনিক্যাল কর্মচারীর ২১ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৮ জন। অফিস কর্মচারী ১৪ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ২৩টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১০ জন। মাঠ কর্মচারীর ১৩২টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮৩ জন। মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাজ্জাত হোসেন চৌধুরী জানান, অতিব জরুরী ভিত্তিতে একজন জুনিয়র কনসালটেন্ড (গাইনী), জুনিয়র একজন কনসালটেন্ড(এনেসঃ), একজন জুনিয়র কনসালটেন্ড (সার্জরী), এমটি (রেডিও), এমটি(ফার্মাঃ), একজন এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, একজন ক্যাশিয়ার, একজন ভান্ডার রক্ষক, একজন জুনিয়র মেকানিক ও নিরাপত্তা কর্মী প্রয়োজন। এ ছাড়াও জরুরী ভিত্তিতে মিড ওয়াইফ, একজন হিসাব রক্ষক, ওয়ার্ড বয়, আয়া, বাবুর্চি/কুক-মশালচী, মালি ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সিএইচসিপি প্রয়োজন। সরঞ্জামাধীর মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন রয়েছে পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন একটি, স্টেরিলাইজার ২টি, ইমারজেন্সী রুমে ওটি লাইট ১টি ও ৩টি চলন্ত ডাস্টবিন প্রয়োজন। উল্লেখিত জনবল সংকট নিরসন ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে ইতোমধ্যে জেলা সিভিল সার্জন বরাবরে আবেদন করা হয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শাহ এমরান চৌধুরী জানিয়েছেন, কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রথম শ্রেণীর ২১টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৪জন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ১ জন, জুনিয়র কনসাটেন্ট একজন, মেডিকেল অফিসার ১জন ও সহকারী সার্জন সমমানের একজন কর্মরত আছেন। ৬টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৬টি পদই শুন্য রয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর ১৬টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৬টি পদ, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৪টি মিডওয়াইফ কর্মকর্তা পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ৩টি পদ। তৃতীয় শ্রেণীর ৬৬ জন কর্মচারীর মধ্যে আছেন মাত্র ৩৬ জন, ৪র্থ শ্রেণীর ২২টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৬জন।
তাই জরুরী ভিত্তিতে লোকবল সংকট নিরসন, ১টি আলট্রাসনোগ্রাফী মেশিন, ১টি ইসিজি মেশিন, ৪ হাজার ওয়াড বিশিষ্ট সোলার প্যানেল ও একটি এ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন।
স্থানীয় লোকজন জানান, কুতুবদিয়া থেকে কোন রোগী অন্যত্র নেওয়া খুব দুরহ ব্যাপার। এটি একটি দ্বীপ উপজেলা হলেও স্বাস্থ্যখাতে কোন অগ্রাধীকার নেই। হাসপাতালে কোন চিকিৎসক না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
জেলা সিজিল সার্জন ডাঃ পুচনু জানান, এই দুই উপজেলার হাসপাতালের শুন্যপদসহ নানা সমস্যার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত আছেন।
মহেশখালী কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক জানান, সরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অধিকাংশ ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছেন। এতে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে উপকুলীয় এলাকাকে। বিগত সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ না হওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মহেশখালী-কুতুবদিয়ায় স্থাস্থ্যখাতে জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাধীর ব্যাপারে জাতীয় সংসদে উত্থাপন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে এই ্দ্বীপ উপজেলা দুইটিতে অগ্রাধীকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতের সংকট নিরসনে আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পক্ষ থেকে দ্রুত সমস্যা নিরসনের বিষয়টি জানিয়েছেন।
দৈনিক কক্সবাজার :