গ্যাস সংকটে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর ফলে গ্রীষ্মের দাবদাহে বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে জাতীয় গ্রিড ও বেসরকারি কেন্দ্র নির্ভরতায় ঝুঁকছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সরকারি কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না হলে রমজানে লোডশেডিংয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিডিবি সূত্র জানায়, গত ২২ মে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৩৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কেন্দ্রগুলো থেকে (সরকারি-বেসরকারি) পাওয়া গেছে ৫০৯ মেগাওয়াট। বাকি ৪২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয়; কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ না পাওয়ায় ওই দিন চট্টগ্রামে অনেক শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক ঘণ্টা বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখছে পিডিবি।
গ্যাসের অভাবে বর্তমানে চট্টগ্রামের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনিট-১ ও একই উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট ২-এর উৎপাদন একমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রায় একই সময় ধরে পটিয়া শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০ মেগাওয়াট ইউনিটটিও বন্ধ রয়েছে। হ্রদের পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে দুটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন শিকলবাহা ডুয়েল ফুলিং ইউনিট ও ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন শিকলবাহা পিকিং ইউনিট থেকে স্বল্প পরিসরে বিদুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এ ছাড়া কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট থেকে সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পিডিবি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান শিমুল আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রামের বড় বিদুৎকেন্দ্রগুলো গ্যাসনির্ভর। গ্যাস সরবরাহ পাওয়া না গেলে উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি পটিয়ার শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রি-কমিশনিং শুরু হওয়ায় গ্যাসের সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এই কেন্দ্রটি পুরোদমে উৎপাদনে গেলে আগের তুলনায় কম গ্যাসে বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তখন আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ বিদুৎ সরবরাহও করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এলএমজি আমদানি শুরু হলে ২০১৮ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গতিশীল হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিটে সর্বমোট ৪২০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা-৬০ ও শিকলবাহা-১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনযোগ্য থাকলেও গ্যাসের অভাবে অনিয়মিতভাবে এসব কেন্দ্র চালু রাখা হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে পানির চাপ কমে যাওয়ায় বর্তমানে তিনটি ইউনিটে উৎপাদন চলছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের সক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট হলেও বর্তমানে গড় উৎপাদন মাত্র ১০০ মেগাওয়াট। এ অবস্থায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি ছাড়া জাতীয় গ্রিডের নির্ভরতা এড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পিডিবির কর্মকর্তারা।
পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের গ্যাসনির্ভর সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সর্বমোট দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ১৩৫ থেকে ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট; কিন্তু প্রতিদিন গ্যাসের সরবরাহ পাওয়া যায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর আগে গ্রীষ্ম মৌসুমে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় চট্টগ্রামের সার উৎপাদনকারী কারখানাগুলোয় গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হয়; কিন্তু চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে কাফকো ও সিইউএফএল চালু থাকায় সেখানের গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো না হলে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই বলে জানান তারা।
পিডিবির তথ্যমতে, এক মাস আগে চট্টগ্রামের দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৯০০ মেগাওয়াটের নিচে থাকলেও গত এক মাস ধরে দৈনিক চাহিদা ৯৩০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। উৎপাদন কম হওয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ এনে চট্টগ্রামের চাহিদা মেটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।