ভোটের আগে নতুন ভ্যাট আইন দুবছরের জন্য স্থগিতের পেছনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার অশুভ ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ভ্যাট আইন স্থগিতের সিদ্ধান্তে মনে হয় সরকার আবারও যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় আসার খায়েশ পোষণ করছে। ক্ষমতায় এসে পুনরায় সেই আইনটি চালু করে জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে বলে মনে হচ্ছে। এই আইন দুবছরের জন্য স্থগিত করা অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী। আগামী নির্বাচনের আগের বছরে আওয়ামী লীগের দেওয়া বাজেটকে গণবিরোধী বলেও আখ্যায়িত করেন রিজভী। সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাসের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) যে বাজেট পাস হলো, সেটি গণবিরোধী ও উদ্ভট তামাশা। জীবনযাত্রার মানকে নিম্নমুখী করা, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ মানব উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, জনগণের পকেট কাটার বাজেট। আমরা এই প্রতিক্রিয়াশীল বাজেটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, প্রথম থেকে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন ও পাস করা পুরো বিষয়টি হচ্ছে একটি তামাশা। এটি জনগণের কল্যাণের জন্য ও দেশকে স্বাবলম্বী করার জন্য করা হয়নি। এটি জনগণের যে সঞ্চিত অর্থ আরও লোপাট এবং এ দেশের মানুষকে গরিব থেকে আরও গরিব করার জন্য করা হয়েছে। এককথায় বলা যায়, এই বিশাল ঘাটতি বাজেট অলীক ও জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার শামিল। বাজেট পাসের আগে প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্যের সমালোচনাও করেন রিজভী আহমেদ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেনÑ আমরা কতটা গণতান্ত্রিক যে, নিজ দলের এমপিরাও অর্থমন্ত্রীকে ছাড় দেয়নি। তামাশা, নাটক ও দেখতে প্রহসন ভালোই লাগে। তবে চক্ষুলজ্জাহীন তামাশা বা অভিনয় মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের অভিনয় দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত ও হতবাক। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীকে নিজ দলের এমপিদের কটূ বাক্যবর্ষণকে প্রধানমন্ত্রী উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আসলে তা হবে পাতানো একতরফা নির্বাচনে গঠিত ভোটারবিহীন সরকারের পাতানো গণতন্ত্রেরই একটি উদাহরণ। অনুদান নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব অর্থে বাজেট দেওয়ার যে কথা শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সমালোচনাও করেন বিএনপির এই নেতা। রিজভী বলেন, এবারই বাজেটে ঘাটতি মোকাবিলায় বিদেশি ঋণ ৪৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা এবং অনুদান হিসেবে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল ভাঁওতাবাজি। ভোটারবিহীন এই সরকার এমনভাবে পরনির্ভরশীল হয়েছে, এমনভাবে তার রাষ্ট্রনীতিকে সাজিয়েছে, যাতে টাকা গড়িয়ে যায় পাশের দেশের দিকে। তা হলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কীভাবে দেশকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম করেছেন? সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন প্রমুখ।