হিমায়িত মাছ কোম্পানি ও বরফকলের জন্য অত্যাবশকীয় অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে খুলনায়। গত দুমাস ধরে চলছে এ অবস্থা। ফলে রপ্তানির জন্য মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় এই সংকট দেখা দিয়েছে।মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় রপ্তানির জন্য সংগ্রহ করা মাছ সংরক্ষণ করা হয় শিতলীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আর এই কাজটি করা হয় অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্বারা পরিচালিত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। মানবদেহে যেমন রক্তের প্রয়োজন, ঠিক তেমনি কোম্পানিতে মাছ প্রসেসিং কাজে প্রয়োজন অ্যামোনিয়া গ্যাসের। কিন্তু গত দুমাস ধরে খুলনা অঞ্চলের মাছ কোম্পানিগুলো ডিলারদের কাছ থেকে চাহিদা মতো অ্যামোনিয়া গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছে না। যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তাও চড়া দাম।
মাছ কোম্পানি ছবি ফিস প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্ত্বাধিকারী মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারি সার কারখানা থেকে ৫০ লিটারের গ্যাসের বোতল দুহাজার টাকায় পান ডিলাররা। ডিলারদের কাছ থেকে আমরা কিনতাম ৪-৫ হাজার টাকায়। গত দুমাস ধরে এই দাম বেড়ে সর্বশেষ ৩০ হাজার টাকা হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে কৃত্রিমভাবে অ্যামোনিয়া গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তিনি জানান, অ্যামোনিয়া গ্যাস মাছ কোম্পানির জন্য অত্যাবশ্যকীয়। দাম যতই হোক কিনতেই হবে। আবার এটি দেশের সর্বত্র পাওয়া যায় না বা আমদানিও করা হয় না। ফলে যারা এর ব্যবসা করেন, তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন। আমরা ব্যবহারকারীরা জিম্মি হয়ে পড়েছি।তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কোম্পানির হিমাগারে ৮০ কোটি টাকারও বেশি প্রক্রিয়াজাত মাছ রপ্তানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই মাছ সংরক্ষণের জন্য আমাদের হিমাগারের তাপমাত্রা মাইনাস ১৮ ডিগ্রির নিচে রাখতে হয়। অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্বারা পরিচালিত প্লান্ট ছাড়া এই তাপমাত্রা রক্ষা করা সম্ভব নয়। সিন্ডিকেট এমন প্রকট হয়েছে যে, এখন অতিরিক্ত টাকা দিয়েও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক রেজাউল হক বলেন, এখন চিংড়ি রপ্তানির ভরা মৌসুম। বড়দিন সামনে রেখে এখন প্রচুর রপ্তানির অর্ডার আসছে। এ সময় সব রপ্তানিকারক আগে থেকে গলদা চিংড়ি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ করেন। চিংড়ি সংগ্রহ থেকে সংরক্ষণ সব স্তরে অ্যামোনিয়া গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। মাছ কোম্পানির প্রতিটি ফ্লোরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এসি বা অন্য কিছু দিয়ে সেটি সম্ভব নয়। গ্যাস সংকটের কারণে আমরা সব ইউনিটের মেশিন চালাতে পারছি না। ফলে আমাদের শ্রমিক মজুরি বাড়ছে।তিনি আরও বলেন, এ¤িœতে বৈদেশিক বাজারে এ বছর মাছের দাম বিগত বছরের তুলনায় ২ থেকে ৩ ডলার পর্যন্ত পড়ে গেছে। ফলে অন্য দেশের সঙ্গে অত্যন্ত প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে চিংড়ি রপ্তানিকারকরা কঠিন সময় পার করছেন। বিষয়টি অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে, কিন্তু এখনো সুরাহা হয়নি।শুধু মাছ কোম্পানি নয়, অ্যামোনিয়া গ্যাস সংকটে ভুগছে বরফকলগুলোও। নতুন বাজার এলাকার বরফকলের ম্যানেজার বাবুল জানান, বরফের ব্যবসা নির্ভর করে ভালো বরফ তৈরির ওপর। আর তা করতে হলে প্লান্টে সব সময় পর্যাপ্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। এই ব্যবসায় লাভ অনেক কম। বেড়েছে বিদ্যুৎ বিল ও লবণের মূল্য। এর পর অ্যামোনিয়া গ্যাসের মূল্য আকাশছোঁয়া হওয়ায় বরফ তৈরি করে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।বরফকলের টেকনিশিয়ান মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্লান্টে অ্যামোনিয়া গ্যাস কম থাকায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অধিক বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে।তবে অ্যামোনিয়া গ্যাস সরবরাহকারীরা বলছেন, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই সংকট।কামাল ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা, আশুগঞ্জসহ সব সার কারখানায় বলতে গেলে উৎপাদন কম হওয়ায় আমরাও বিপাকে পড়েছি। বড় মহাজনরা মূলত ডিলার। তারা যা বলেন আমরা সেই তথ্যটুকুই জানতে পারি।