এখন থেকে হাজার কোটি বছরেরও বেশি আগে পৃথিবী থেকে বহু দূরের এক ছায়াপথে মৃত দুটি তারার সংঘর্ষ হয়েছিল। ১৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরের তারা দুটির সংঘর্ষ ও ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের আলোড়ন এতদিন বাদে পৌঁছেছে পৃথিবীতে। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সোনা, রূপা ও প্লাটিনামসহ ভারী ধাতু উৎপত্তির পরিষ্কার তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
শতবর্ষ আগে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন প্রথম তাত্ত্বিকভাবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের অস্তিত্ব অনুমান করেছিলেন। তার মতে মহাবিশ্বে চাদরের মতো ছড়িয়ে আছে স্থান-কাল বা স্পেস টাইম। জগতের যে কোনো প্রান্তে তারার মৃত্যু বা গঠনের মত বড় ধরনের ঘটনা আলোড়ন তোলে সেই চাদরে। এই আলোড়ন প্রবাহই হলো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বা গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ। এই তরঙ্গ পর্যবেক্ষণে অবদানের জন্য এ বছর পদার্থে নোবেল জেতেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী রেইনার উইস, ব্যারি সি ব্যারিশ ও কিপ এস থর্ন।
পৃথিবী থেকে আলোর গতিতে ছুটলে ১৩ কোটি বছর পর পৌঁছানো যাবে এনজিসি ফোর নাইন নাইন থ্রি ছায়াপথে হাইড্রা নক্ষত্রপুঞ্জে। আর সেখানেই দুটি মৃত তারা বা নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষের আলোড়ন পৃথিবীতে পৌঁছেছে গত ১৭ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের লাইগো-ভার্গো অবজারভেটরি এই মহাকর্ষীয় আলোড়ন শনাক্ত করে রূপান্তর করেছে শব্দ তরঙ্গে। আর এই শব্দ তরঙ্গ বিশ্লেষন করেই সংঘর্ষের পুরো তথ্য এখন বিজ্ঞানীদের হাতের মুঠোয়।
পৃথিবীতে তখন চলছে ডাইনোসর যুগ। কোটি কোটি কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে সম্প্রতি এই সংঘর্ষের আলোড়ন পৌঁছেছে পৃথিবীতে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিউট্রন তারার এ ধরনের সংঘর্ষে যে বিপুল শক্তি নির্গত হয় তার থেকেই সৃষ্টি স্বর্ণ, প্লাটিনাম, ইউরেনিয়ামের মত ভারী সব ধাতুর। সে অর্থে অলঙ্কার থেকে শুরু করে পারমাণবিক বোমার মূল উপাদান উৎপত্তির পরিষ্কার ছবি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের মতে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মধ্যেই অবিকৃত অবস্থায় টিকে আছে বিশ্ব জগতের সব তথ্য। যা অনেকটা মহাবিশ্বের কথা বলার নিজস্ব ভাষার মত। আর এ ভাষার অর্থ উদ্ধার করেই জানা যাবে মহাবিশ্বের সব গোপন রহস্য।