বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ৪৬ বছর আগে এই আসনে জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। তার পর থেকেই হাতছাড়া আসনটি।
পর পর টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরও আসনটিতে জয়লাভ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই এবার আদাজল খেয়ে মাঠে নামতে চাইছে তারা। এবার এখানে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। বিএনপি বগুড়া-৬ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে।
তিনি মাঠের রাজনীতিবিদ নন। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। এর আগে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবর রহমানের কাছে তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত হন। যদিও তিনি ওই আসনে চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কিন্তু গত নির্বাচনে তিনি হেরে যান। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এ আসনে নতুন মুখ। তা ছাড়া বিএনপি এখন দ্বিধাবিভক্ত। এক পক্ষকাল ধরে জেলা কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। নতুন কমিটি এখনো দখল নিতে পারেনি দলীয় কার্যালয়।
যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি স্থগিত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে দল থেকে বহিষ্কার ও পদ স্থগিত করে রাখা হয়েছে। এসব কারণে সাধারণ ভোটাররা এবার বিএনপির ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে মনে করছেন তারা।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাজোটের প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমরকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন।
পরবর্তী সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ায় এ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৪ জুন উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিএনপি প্রার্থী দেওয়ায় এ আসনে জমজমাট ভোটের লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি এ আসনের জন্য খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনকে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন দেয়। এদের মধ্যে তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
তাদের মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, সাবেক জেলা সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, পৌর মেয়র ও সাবেক জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে পৌর মেয়র একেএম মাহবুবুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।
বর্তমানে বিএনপির দুজন প্রার্থী থাকলেও মঙ্গলবার গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকেই বিএনপির একমাত্র দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা কেন্দ্র করে দৃশ্যত জেলা বিএনপি এখন দুই শিবিরে বিভক্ত।
অন্তর্দ্বন্দ্ব এখন এতই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, যুবদলের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির একাধিক নেতার পদ-পদবি স্থগিত করা হয়েছে। বিদ্রোহী গ্রুপটি উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে মেনে না নিয়ে তার বিরোধিতা করছে।
তারা যে কোনো মূল্যে সিরাজকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির এই অন্তর্দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টি জামান নিকেতা বিএনপিকে গুরুত্ব না দিয়ে বলছেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্যই বগুড়া সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হবেন।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া সদর আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসএম সিরাজুল ইসলাম সুরুজ বিজয়ী হন। এর পর আর ৪৬ বছরে আওয়ামী লীগ কখনো বিজয়ী হতে পারেনি।
এই কারণে আওয়ামী লীগর উপনির্বাচনে বিজয়ী হতে সংঘবদ্ধভাবে মাঠে নামবে। এদিকে উপনির্বাচনের আগমুহূর্তে বিএনপির এমন পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছে। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ কারা করবে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে।