শিল্পা শেঠি। রূপে, গুণে বেশ অনন্যা এই নায়িকা। প্রথম ১৯৯৩ সালে শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘বাজিগর’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিষেকের পর থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ৪০টি বলিউড, তামিল, তেলেগু এবং কন্নড় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। শিল্পা প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন ১৯৯৪ সালের ‘আগ’ ছবিতে। এছাড়াও তিনি ‘ধাড়কান’ এবং ‘রিস্তে’ চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয় নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন।
এদিকে, ২০০৪ সালে শিল্পা ‘ফির মিলিঙ্গে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অনেক পুরস্কার লাভ করেন। সেই ছবিতে তিনি একজন এইডস রোগী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। এরপর ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাকে তেমন কোনো ছবিতে দেখা যায়নি। পরে ২০০৮ সালে মুক্তি পায় জন আব্রাহাম ও অভিষেক বচ্চনের আলোচিত ছবি ‘দোস্তানা’। বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায় সিনেমাটি। সেখানেই ‘শাট আপ অ্যান্ড বাউন্স’ আইটেম গানে একেবারে নতুন রূপে হাজির হয়েছিলেন শিল্পা।
ওই গানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, এরপর থেকে মনে করা হচ্ছিল, বলিউডে নতুন ইনিংস খেলতে যাচ্ছেন শিল্পা। কিন্তু, সেই মনে করাটা স্রেফ মনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এরপরের ছয়টা বছর আর কোনো সিনেমাতেই হাজির হননি এই নায়িকা। তবে মাঝে একটি কাজ করে বেশ আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে এই নিয়ে বেশ কিছু খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০৯ সালে ব্যবসায়ী রাজকুন্দ্রাকে বিয়ে করেন শিল্পা। এরপর পরিবারের ব্যবসা আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান তিনি।
এদিকে, ২০১২ সালে এসে শিল্পার কোলে আসে পুত্র সন্তান। যেটির পর একেবারে মিডিয়া থেকে গায়েব হয়েছিলেন তিনি। পরে ২০১৪ সালে প্রযোজক হিসেবে ‘ডিশকিয়া’ সিনেমার ‘তু মেরে টাইপ কা নেহি’ গানে অল্প কিছুক্ষণ থাকলেও সেটা লোকের মুখে মুখে আলোচিত হয়নি। এরপর আবারো বলিউডে অনুপস্থিত শিল্পা। সেই অনুপস্থিতি এখনো চলছে।
শিল্পা অত্যন্ত ফিটনেস সচেতন একজন নায়িকা। রূপে, গুণে, অভিনয়ে কোনোদিকে কমতি নেই তার। তাহলে হুট করে কেন হারিয়ে গেলেন তিনি? ১৯৯৩ সালে শাহরুখ খানের বিপরীতে বাজিগরের মতো সুপারহিট সিনেমা দিয়ে বলিউডে আসা এই ‘বোল্ড উইদ দ্য বিউটি’র হারিয়ে যাওয়াকে একেবারে মানতে পারছেন না বলিউড দর্শকরা।
এদিকে, মাঝে অন্য একটি কাজ নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) তার দল রাজস্থান রয়্যালসকে নিয়ে সময়টা ভালোই কাটছিল তার। এর মধ্যেই শোনা যায় ফিক্সিং-স্পট ফিক্সিংয়ের আনাগোনা। একটা সময় শিল্পার স্বামী রাজ কুন্দ্রাকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হত। এমনকি বেশ কয়েকবার পুলিশের জেরার মুখেও পড়েছিলেন তিনি। কালক্রমে আইপিএল থেকে নিষিদ্ধ হয়ে যায় এক সময়কার চ্যাম্পিয়ন দল রাজস্থান রয়্যালস। তবে আইপিএলে এই দলটি পরে ঠিকই ফিরেছে, কিন্তু মালিকানা পাল্টে যাওয়া শিল্পা-কুন্দ্রাদের ফেরা হয়নি।
এমন ঘটনার পর নিজেকে আরো গুটিয়ে নেন বলিউড প্রিয়দর্শনি শিল্পা। তবে সম্প্রতি বাজারে এসেছে তার রান্নার বই। যার নাম ‘দ্য ডায়েরি অফ আ ডমেস্টিক ডিভা’। এই রান্নার বইয়ে শিল্পা শেঠির নিজস্ব ৫০টি রেসিপি দেয়া হয়েছে। ইউটিউবে তার রান্নার চ্যানেলটাও বেশ জমে উঠেছে। তবে এর আগে, যোগ ব্যায়ামের সিডিও প্রকাশ করেছিলেন শিল্পা। বোঝাই যাচ্ছে, বলিউড থেকে হারিয়ে গেলেও শিল্পার ব্যস্ততা একেবারে কমে যায়নি। মাঝে মাঝে ভিন্ন কিছু কাজ দিয়ে দর্শকদের মাঝে বেঁচে থাকতে চান তিনি।
শিল্পার অর্জন: অভিনয়ে শিল্পা এতটা মনযোগী কখনোই ছিলেন না, যেখান থেকে তার জন্য অনেক পুরস্কার অপেক্ষা করবে। অভিনেত্রী বা তারকা হিসেবে শিল্পা শেঠি কেমন ছিলেন? এমন উত্তরে যে কেউই বলবে, শিল্পা এমন কেউ ছিলেন না, যার ওপর একটা সিনেমার সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করা যায়। কারণ অভিনয়ে কখনো তিনি জান প্রাণ দিয়ে করতেন না। এই কারণে কখনোই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বা ফিল্ম ফেয়ার পাননি তিনি। যদিও ফিল্ম ফেয়ারের মঞ্চে সেরা নবাগত অভিনেত্রী, সেরা পার্শ্ব-চরিত্র ও সেরা অভিনেত্রী- তিনটি ক্যাটাগরিতেই একবার করে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।
এদিকে, ২০০৭ সালে বৈশ্বিকভাবে প্রভাব রাখার কারণে আইফা জিতেছিলেন শিল্পা। কারণ সে বছরই ব্রিটিশ রিয়েলিটি শো ‘বিগ ব্রাদার’-এর পঞ্চম আসরে বিজয়ীর মুকুট পরেছিলেন তিনি। তখন শিল্পাকে ঘিরে বর্ণবাদ নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ওই বছরই ‘লাইফ ইন আ… মেট্রো’ ও ‘আপনে’ নামের দু’টি ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেন শিল্পা শেটি। তবে, এই সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি বহু বছর। কয়েকবছর পর তিনি আবারো হারিয়ে যান।